কখন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট এর পরামর্শ নেওয়া উচিত? জানুন প্রয়োজনীয়তা

কখন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট এর পরামর্শ নেওয়া উচিত? জানুন প্রয়োজনীয়তা

  • 18 Nov 2024
  • Best Doctor List

আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পেটের স্বাস্থ্য সুস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরী। তবে যখন হজম প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা দেখা দেয় বা পেটের ব্যথা দৈনন্দিন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে, তখন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট এর পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এই বিশেষজ্ঞরা পাকস্থলী, অন্ত্র এবং হজম প্রক্রিয়ার জটিল বিষয় গুলো নিয়ে কাজ করেন এবং নির্দিষ্ট রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেন।

কখন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত?  

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট হলেন এমন একজন চিকিৎসক, যিনি পাকস্থলী, অন্ত্র, লিভার, এবং পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য অংশের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার গুণগত মান পেট ও অন্ত্রের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এ কারণে অনেকেই বিভিন্ন সময়ে পেটের সমস্যায় ভোগেন। তবে কিছু লক্ষণ এমন হয়, যা অবহেলা করা বিপজ্জনক। এই ধরনের সমস্যা গুলোর ক্ষেত্রে সময়মতো গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  

এখানে আমরা গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের কাছে কখন যেতে হবে এবং কেন যেতে হবে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।  

১.দীর্ঘস্থায়ী পেট ব্যথা  

সাধারণ পেট ব্যথা খাবারজনিত সমস্যার কারণে হতে পারে এবং তা সাধারণত নিজে নিজেই সেরে যায়। তবে যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং কোনো ওষুধেও কম না হয়, তা হলে এটি অন্ত্রের সংক্রমণ, আলসার বা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোমের (IBS) মতো রোগের লক্ষণ হতে পারে।  

২.অম্বল, বদহজম, ও গ্যাস

অম্বল, বদহজম, বা গ্যাস হওয়া মাঝে মাঝে স্বাভাবিক, তবে যদি এটি ঘন ঘন হয় এবং আপনার দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়, তা হলে তা গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। যেমন, 

  • গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD)।
  • হাইটাল হার্নিয়া।
  • অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরণ।

এই সমস্যা গুলো যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে তা পাকস্থলীর প্রদাহ বা আলসারের কারণ হতে পারে।  

৩.বমিভাব ও বমি 

ঘন ঘন বমিভাব বা বমি হওয়া কোনো সাধারণ সমস্যা নয়। বিশেষত, খাবার খাওয়ার পরে বারবার বমি হলে তা অস্বাভাবিক হতে পারে। যেমন, 

  • পাকস্থলীর আলসার।
  • পাইলোরিক স্টেনোসিস।
  • গ্যাস্ট্রোপেরেসিস।

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের পরামর্শ ছাড়া এই সমস্যাগুলো অবহেলা করলে অপুষ্টি বা পানিশূন্যতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।  

৪.ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য

পরিপাকতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ না করলে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। যদি এই সমস্যা গুলো দীর্ঘদিন ধরে থাকে, তা হলে তা বড় ধরনের অন্ত্রের রোগের লক্ষণ হতে পারে। যেমন,  

  • ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS)।
  • ক্রোনস ডিজিজ।
  • আলসারেটিভ কোলাইটিস।

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট সমস্যার মূল কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবেন।  

 ৫.রক্তাক্ত মল বা কালো মল

মলে রক্ত থাকা বা মলের রং কালো হওয়া কোনো সাধারণ সমস্যা নয়। এটি পরিপাকতন্ত্রের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ বা ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। যেমন,  

  • হেমোরয়েড।
  • গ্যাস্ট্রিক আলসার।
  • কোলোরেক্টাল ক্যানসার।

রক্তক্ষরণ কোথা থেকে হচ্ছে তা নির্ণয় করা জরুরি। গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট এন্ডোস্কপি বা কোলনোস্কপির মাধ্যমে সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করতে পারবেন।  

৬.অপুষ্টি ও ওজন হ্রাস  

অপুষ্টি ও অযাচিত ওজন কমে যাওয়া পরিপাকতন্ত্রের সমস্যার একটি গুরুতর লক্ষণ। বিশেষত, যদি খাবার খাওয়ার পরও পুষ্টির ঘাটতি দেখা যায়, তা হলে তা অবহেলা করা উচিত নয়। কেননা, এটি বেশ কিছু রোগের লক্ষন হতে পারে। যেমন,  

  • কো-অ্যাক ডায়সিস।
  • ক্রোনস ডিজিজ।
  • অন্ত্রের শোষণ প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত।

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করবেন এবং পুষ্টি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবেন।  

৭.পেট ফুলে যাওয়া

পেটের অতিরিক্ত ফোলা হজমে সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পরেও না কমে, তাহলে এটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে। যেমন,  

  • গ্যাস্ট্রাইটিস।
  • ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS)।
  • লিভারের সমস্যার কারণে পানি জমে যাওয়া।

৮.হলুদ বমি বা চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া

যদি বমির রং হলুদ হয় বা চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়, তা হলে তা লিভারের গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যেমন,

  • লিভারের প্রদাহ বা সিরোসিস।
  • পিত্তথলিতে পাথর।
  • হেপাটাইটিস।

এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন, কারণ এটি দীর্ঘমেয়াদী লিভারের সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে।  

কখন আপনার জন্য গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট অপরিহার্য?  

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া মানেই বড় কোনো অসুখ ধরা পড়বে এমন নয়। বরং এটি সময়মতো রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার পেটের সমস্যা গুলো ঘন ঘন দেখা দেয় এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়, তা হলে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।  

মনে রাখুন, সময়মতো নেওয়া পদক্ষেপ জীবন রক্ষা করতে পারে। আপনার পেট ও অন্ত্রের সুস্থতার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বজায় রাখুন। দীর্ঘস্থায়ী কোনো লক্ষণ অবহেলা করবেন না। সুস্থ জীবনযাপনে নিজেকে সচেতন রাখাই আপনার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।