এইচএমপিভি ভাইরাস কী? কতোটা ভয়াবহ? লক্ষণ ও ভ্যাকসিনের দাম সম্পর্কে জেনে নিন
- 08 Jan 2025
- Best Doctor List
এইচএমপিভি ভাইরাস কী?
এইচএমপিভি (Human Metapneumovirus বা HMPV) একটি ভাইরাস যা মানুষের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়। এটি প্যারামিক্সোভাইরাস পরিবারভুক্ত একটি ভাইরাস এবং বিশেষত শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। এই ভাইরাসটি সাধারণ ঠান্ডাজনিত সমস্যা থেকে শুরু করে গুরুতর নিউমোনিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে প্রথম এই ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি শীত ও বসন্তকালে বেশি সক্রিয় হয় এবং মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে।
এইচএমপিভি সাধারণত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ানো ড্রপলেট, দূষিত পৃষ্ঠের স্পর্শ, বা সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়ায়। ভাইরাসটি শিশুদের শ্বাসতন্ত্রে ব্রংকিওলাইটিস এবং নিউমোনিয়ার মতো জটিল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যেহেতু এই ভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন নেই, তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত হাত ধোয়া, দূষিত পৃষ্ঠ এড়ানো এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এর সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।
এইচএমপিভি ভাইরাসের ইতিহাস ও সংক্রমণের ধরন
এইচএমপিভি ভাইরাস প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল নেদারল্যান্ডসে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি সাধারণত শীত এবং বসন্তকালে সংক্রমণ ঘটায়।
সংক্রমণের প্রধান মাধ্যম:
- শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে: হাঁচি-কাশির সময় ছড়ানো ড্রপলেট ভাইরাস ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম।
- স্পর্শের মাধ্যমে: দূষিত পৃষ্ঠে হাত দিয়ে মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করলেও সংক্রমণ হতে পারে।
- সংস্পর্শে আসা: সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ফলে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
এইচএমপিভি ভাইরাস কতটা ভয়াবহ?
এই ভাইরাসটি সাধারণ ঠান্ডাজনিত সমস্যা থেকে শুরু করে গুরুতর নিউমোনিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী:
- শিশু (বিশেষত ৫ বছরের কম বয়সী)
- বয়স্ক ব্যক্তিরা
- যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল
- ক্রনিক অসুখে ভুগছেন এমন ব্যক্তি
সাধারণ লক্ষণ:
- নাক দিয়ে পানি পড়া
- কাশি
- গলাব্যথা
- জ্বর
- শ্বাসকষ্ট
- বমি বা ডায়রিয়া (কিছু ক্ষেত্রে)
গুরুতর লক্ষণ:
- ব্রংকিওলাইটিস
- নিউমোনিয়া
- শ্বাসতন্ত্রের অবরোধ
চিকিৎসার অভাবের কারণে এইচএমপিভি কতটা মারাত্মক হতে পারে?
যেহেতু এইচএমপিভি-র জন্য নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই, তাই সঠিকভাবে নির্ণয় এবং সাপোর্টিভ চিকিৎসা দেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এইচএমপিভি ভাইরাসের লক্ষণ
এই ভাইরাসের লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের ৩-৬ দিনের মধ্যে দেখা দেয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
মৃদু লক্ষণ:
- নাক দিয়ে পানি পড়া
- হালকা জ্বর
- মাথা ব্যথা
মাঝারি থেকে গুরুতর লক্ষণ:
- তীব্র কাশি
- গলা ব্যথা
- শ্বাসকষ্ট
- বুকে ব্যথা
অত্যন্ত গুরুতর লক্ষণ:
- নিউমোনিয়া
- অক্সিজেনের অভাব
- হসপিটালাইজেশনের প্রয়োজন
এইচএমপিভি ভাইরাসের নির্ণয় পদ্ধতি
এই ভাইরাস নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- আরটিপিসিআর টেস্ট: ভাইরাসের আরএনএ শনাক্ত করার জন্য সবচেয়ে নির্ভুল পদ্ধতি।
- র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট: দ্রুত ফলাফলের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- সাংস্কৃতিক টেস্ট: ভাইরাসের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে নির্ণয় করা হয়।
প্রতিরোধের উপায়
এইচএমপিভি প্রতিরোধের জন্য কিছু সাধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত:
- হাত ধোয়া: প্রতিবার খাবার আগে এবং বাইরে থেকে আসার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া।
- মুখ ঢেকে রাখা: হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা।
- দূষিত পৃষ্ঠ এড়ানো: জনবহুল জায়গায় কম যাওয়া।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া।
এইচএমপিভি ভাইরাসের ভ্যাকসিন
এইচএমপিভি-র জন্য সরাসরি কোনো ভ্যাকসিন এখনও বাজারে নেই। তবে গবেষণা চলছে এবং ভবিষ্যতে এটি উন্মুক্ত হতে পারে।
অন্যান্য ব্যবস্থাপত্র:
- গুরুতর রোগীদের জন্য অক্সিজেন থেরাপি
- ভাইরাল ফ্লু প্রতিরোধে সাধারণ ফ্লু ভ্যাকসিন
ভ্যাকসিনের সম্ভাব্য দাম
যদি এইচএমপিভি-র জন্য ভ্যাকসিন বাজারে আসে, এর দাম ভৌগোলিক অঞ্চল এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করবে। সাধারণত, নতুন ভ্যাকসিনের দাম ২০০০-১০০০০ টাকা হতে পারে।
উপসংহার
এইচএমপিভি ভাইরাস একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। সঠিক সময়ে চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। জনসাধারণের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রচার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।