হার্নিয়া কি ধরণের অসুখ, হার্নিয়া অপারেশন খরচ কত ?

হার্নিয়া কি ধরণের অসুখ, হার্নিয়া অপারেশন খরচ কত ?

  • 11 Jun 2024
  • Best Doctor List

হার্নিয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে হতে পারে। এটি ঘটে যখন শরীরের কোনো অভ্যন্তরীণ অঙ্গ দুর্বল বা ছিদ্রযুক্ত পেশির মধ্য দিয়ে বের হয়ে আসে। সাধারণত পেটের দেয়ালের দুর্বল অংশ দিয়ে হার্নিয়া দেখা দেয়। এটি নবজাতক থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সকলের মধ্যেই হতে পারে। পেটের নীচের অংশ, কুঁচকি বা নাভির আশেপাশে হার্নিয়ার উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা যায়।

হার্নিয়া অনেক ধরণের হতে পারে, যেমন ইনগুইনাল হার্নিয়া, ফেমোরাল হার্নিয়া, আম্বিলিকাল হার্নিয়া এবং ইনসিশনাল হার্নিয়া। প্রতিটি ধরণের হার্নিয়ার নিজস্ব বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং লক্ষণ রয়েছে। এটি কখনও কখনও সামান্য অস্বস্তি সৃষ্টি করে, তবে উপেক্ষা করলে বড় সমস্যার কারণ হতে পারে।

হার্নিয়া নির্ণয় এবং চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি, কারণ সময়মতো সঠিক চিকিৎসা করলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। হার্নিয়া অপারেশনের জন্য খরচ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকা রোগী এবং তার পরিবারের জন্য সহায়ক। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই রোগকে অবহেলা করা উচিত নয়।

 

সিরিয়াল ও ইনফরমেশন এর  জন্য কল করুন - 01902991500 (সকাল ১০:০০ টা হতে রাত  ০১০:০০ টা, শুক্রবার ব্যাতিত)।


 

হার্নিয়া রোগের সংজ্ঞা ও ধরণ:

হার্নিয়া বলতে বোঝায় শরীরের কোনো অংশের টিস্যু বা অঙ্গ তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে বের হয়ে আসা। এটি প্রধানত পেটের দেয়ালের দুর্বল অংশ দিয়ে বের হয়ে আসে।

হার্নিয়ার সাধারণ ধরণসমূহ:

  1. ইনগুইনাল হার্নিয়া (Inguinal Hernia):
    • এটি সবচেয়ে সাধারণ হার্নিয়া।
    • পেটের নিচের অংশে কুঁচকিতে ঘটে।
    • পুরুষদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
  2. ফেমোরাল হার্নিয়া (Femoral Hernia):
    • মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।
    • উরুর শিরার নিকটে ঘটে।
  3. আম্বিলিকাল হার্নিয়া (Umbilical Hernia):
    • এটি নবজাতক শিশুদের নাভির কাছে ঘটে।
  4. ইনসিশনাল হার্নিয়া (Incisional Hernia):
    • পূর্বের কোনো অস্ত্রোপচারের ক্ষতস্থলে ঘটে।
  5. হায়েটাল হার্নিয়া (Hiatal Hernia):
    • পেটের উপরের অংশ যখন ডায়াফ্রামের ছিদ্র দিয়ে বুকে উঠে আসে।

হার্নিয়া রোগের লক্ষণ:

হার্নিয়ার লক্ষণ একেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

সাধারণ লক্ষণসমূহ:

  1. গোল্ডা বা ফোলাভাব: শরীরের বিশেষ কোনো অংশে নরম ফোলাভাব দেখা যায়। এটি পেটে, কুঁচকিতে বা নাভির কাছে হতে পারে।
  2. ব্যথা:
    • ফোলাভাবের সঙ্গে ব্যথা থাকতে পারে।
    • কাশি, হাঁচি, ভার তোলার সময় ব্যথা বাড়ে।
  3. অস্বস্তি: পেটে ভারীভাব, টান, জ্বালা বা চাপ অনুভূত হয়।
  4. দুর্বলতা: আক্রান্ত স্থানে দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।

বিভিন্ন ধরণের হার্নিয়ার বিশেষ লক্ষণ:

  • ইনগুইনাল হার্নিয়া:
    • ব্যথা স্ক্রোটাম পর্যন্ত ছড়াতে পারে।
    • টেস্টিকেলের ফোলাভাব হতে পারে।
  • ফেমোরাল হার্নিয়া:
    • উরুতে ব্যথা এবং পা ফুলে যেতে পারে।
  • আম্বিলিকাল হার্নিয়া: নাভির কাছে ফোলাভাব দেখা যায়।
  • ইনসিশনাল হার্নিয়া: অস্ত্রোপচারের ক্ষতস্থলে ফোলাভাব হয়।

হার্নিয়া রোগের জটিলতা:

যদি হার্নিয়ার চিকিৎসা না করা হয়, তবে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। প্রধান জটিলতাগুলি হল:

  1. আটকে যাওয়া হার্নিয়া (Strangulated Hernia):
    • যখন অন্ত্র বা অন্য কোনো অঙ্গ হার্নিয়াল থলির মধ্যে আটকে যায় এবং রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এটি জরুরী চিকিৎসা প্রয়োজন।
    • লক্ষণ:
      • তীব্র ব্যথা
      • ফোলাভাব লাল বা কালচে হয়ে যাওয়া
      • বমি বমি ভাব এবং জ্বর
  2. টিস্যু মৃত্যু (Tissue Necrosis):
    • রক্ত সরবরাহ বন্ধ হলে টিস্যু মৃত্যু হতে পারে।
  3. অন্ত্রের বাধা (Bowel Obstruction):
    • অন্ত্রের বাধা সৃষ্টি করে খাদ্য ও তরল চলাচল বন্ধ করে দেয়।
    • লক্ষণ:
      • তীব্র পেটে ব্যথা
      • কোষ্ঠকাঠিন্য
  4. সংক্রমণ: হার্নিয়াল থলি সংক্রমিত হতে পারে।
  5. পুনরাবৃত্তি (Recurrence): অস্ত্রোপচারের পরেও হার্নিয়া পুনরায় দেখা দিতে পারে।

হার্নিয়া রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা:

হার্নিয়া রোগ নির্ণয়ের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ শারীরিক পরীক্ষা প্রয়োজন। কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করতে পারেন:

  1. ইমেজিং পরীক্ষা:
    • আল্ট্রাসাউন্ড
    • সিটি স্ক্যান বা এমআরআই
  2. শারীরিক পরীক্ষা:
    • ফোলাভাবের অবস্থান এবং প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ।

চিকিৎসা পদ্ধতি: হার্নিয়ার চিকিৎসার প্রধান পদ্ধতি হলো অস্ত্রোপচার। এটি দুইভাবে করা যেতে পারে:

  1. ওপেন সার্জারি:
    • ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি।
    • পেটে একটি বড় চেরা দিয়ে অঙ্গগুলি সঠিক স্থানে ফিরিয়ে এনে পেশি শক্ত করা হয়।
  2. ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি:
    • আধুনিক এবং ন্যূনতম আক্রমণাত্মক পদ্ধতি।
    • ছোট ছোট ছিদ্র করে ক্যামেরা এবং বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে অপারেশন সম্পন্ন হয়।

হার্নিয়া অপারেশনের খরচ:

বাংলাদেশে হার্নিয়া অপারেশনের খরচ বিভিন্ন বিষয়ে নির্ভর করে। এসব বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

  1. অস্ত্রোপচারের ধরণ:
    • ওপেন সার্জারি: খরচ তুলনামূলক কম।
    • ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি: বেশি খরচ হয়।
  2. অ্যানাস্থেসিয়া:
    • স্থানীয় অ্যানাস্থেসিয়া সাধারণত কম খরচে হয়।
    • জেনারেল অ্যানাস্থেসিয়া বেশি খরচ হয়।
  3. হাসপাতালের অবস্থান:
    • বড় শহরের হাসপাতালের খরচ গ্রামীণ এলাকার হাসপাতালের তুলনায় বেশি।
  4. ডাক্তারের অভিজ্ঞতা: অভিজ্ঞ ডাক্তারদের ফি তুলনামূলক বেশি হতে পারে।

গড় খরচের পরিমাণ:

  • ওপেন সার্জারি: ৳ ৩০,০০০ থেকে ৳ ১,০০,০০০ টাকা।
  • ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি: ৳ ৫০,০০০ থেকে ৳ ২,০০,০০০ টাকা।

আপনার করণীয়:

  1. হার্নিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
  2. প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
  3. অস্ত্রোপচারের আগে ডাক্তারের সাথে খরচ এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করুন।
  4. অস্ত্রোপচারের পর নিয়মিত চেকআপ করান।
  5. সিরিয়াল ও ইনফরমেশন এর  জন্য কল করুন - 01902991500 (সকাল ১০:০০ টা হতে রাত  ০১০:০০ টা, শুক্রবার ব্যাতিত)।


 

পরিশেষে:

হার্নিয়া একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বসহকারে নেওয়ার মতো অসুখ। এটি অবহেলা করলে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে অন্ত্রের বাধা, সংক্রমণ বা টিস্যু মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি অন্তর্ভুক্ত। এসব জটিলতা থেকে বাঁচতে রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করলে হার্নিয়া সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়। সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করা সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরণের ওষুধ সেবন বা ঘরোয়া পদ্ধতি প্রয়োগ করা উচিত নয়।

স্বাস্থ্য সচেতনতা আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হওয়া উচিত। নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে হার্নিয়া থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। চিকিৎসা সেবা গ্রহণে অবহেলা করা কখনো উচিত নয়, কারণ এটি পরবর্তীতে গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

সুতরাং, নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব।